প্রাকৃতিক উপাদান নির্ভর ট্রেডিশনাল মেডিসিন বা দেশীয় চিকিৎসা সহজ, সুলভ ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ামুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে সমাদৃত। পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক দেশেই প্রাকৃতিক উপাদান নির্ভর চিকিৎসা পদ্ধতির প্রচলন কমবেশী রয়েছে । ট্রেডিশনাল মেডিসিন বা দেশীয় চিকিৎসার দুটি ধারা :(১) ইউনানী চিকিৎসা পদ্ধতি ও (২) আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতি।
প্রাকৃতিক উপাদান নির্ভর চিকিৎসা বা দেশীয় চিকিৎসা পদ্ধতির ইতিহাস মানব ইতিহাসের সমান্তরাল ও সমসাময়িক মনে করলে একেবারে ভুল হবে না। বাঁচার তাগিদে, সুস্থ থাকার প্রয়োজনে মানুষ বিবেক বিবেচনা খাটিয়েছে এবং হাতের কাছে প্রাপ্ত সম্পদ বিভিন্ন উপায়ে কাজে লাগিয়েছে।
যুগের ক্রমবিবর্তনের সাথে সাথে চিকিৎসা বিজ্ঞানেরও উন্নতি ও প্রসার লাভ করে। প্রাচীনতম নীতি বিদ্যার মূলসূত্র প্রথম প্রণীত হয় ব্যাবিলনে (২২০০ BC) চিকিৎসকদের কাছে মানুষ যে ধরণের আচরণ প্রত্যাশা করে তার বিস্তারিত বিবরণ থাকে এ নীতিমালায়। গ্রীক চিকিৎসক হিপোক্রেট (377-460 BC) এ বিষয়ে আরও ব্যাপক অবদান রাখেন। মিসরীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রভূত উন্নয়ন সাধিত এবং শল্যবিদ্যায় দক্ষতা অর্জিত হয়। রোমানদের আগমনের ফলে অন্যান্য বিষয়ের সাথে চিকিৎসা বিজ্ঞানও গ্রীক এবং রোমানদের হাতে চলে যায়। মিশরের চিকিৎসা বিজ্ঞান গ্রীসে এলে ইউনানী চিকিৎসা বিজ্ঞান নাম ধারণ করে। এ চিকিৎসা বিজ্ঞান ইউরোপে প্রসার লাভ করলে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপিত হয়।
পৃথিবীর অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের পাশাপাশি ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানও প্রাচীন। যা আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসা বিজ্ঞান নামে খ্যাত। ঐতিহাসিক স্যার জন মার্শালের মতে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে ভারতের জনসাধারণের জীবন ধারণ উন্নতমানের ছিল। বাবেল ও মিশরীয় সভ্যতার চাইতে তারা পিছিয়ে ছিলনা। বৈদিক যুগের পর (খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ হতে খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০সাল) ব্রাহ্মযুগের সূচনা। এ যুগে আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের উজ্বল জ্যোতিষ্কসমূহ দৃষ্টিগোচর হয়। সুশ্রুত, চরক ও ভগবত এ যুগেই পদার্পন করেছিলেন।
১৯৪৭ ইং সালে দেশ বিভাগের পর ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের দাবীর মুখে ১৯৫৬ ইং সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক আাইন পাশ এবং ১৯৫৭ সালের মাঝামাঝি কার্যকর হয়। কিন্তু ১৯৫৮ ইং সালে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের পারস্পরিক মত বিরোধের সুযোগে তৎকালীন সামরিক শাসক আইনটি বাতিল করে। এর প্রায় এক দশক পর ১৯৬৫ ইং সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক এ্যাক্ট পাশ হয়। ১৯৭১ ইং সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যূদ্বয়ের পর অন্যান্য আইনের সাথে ১৯৬৫ ইং সালের ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক আইনের কার্যকারীতা বহাল থাকে। বোর্ড অব ইউনানী অ্যান্ড আয়ুর্বেদিক সিস্টেমস্ অব মেডিসিন বাংলাদেশ নামে ঢাকায় বোর্ডের দফতর স্থাপিত ও কার্যক্রম শুরু হয়। এর প্রায় এক যুগ পর “বাংলাদেশ ইউনানী অ্যান্ড আয়ুর্বেদিক প্র্যাকটিশনার্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩ (অর্ডিন্যান্স নং- XXXII/১৯৮৩)” জারী হয় এবং “বাংলাদেশ বোর্ড অব ইউনানী অ্যান্ড আয়ুর্বেদিক সিস্টেমস্ অব মেডিসিন” নামে বোর্ডের নামকরন হয়।